স্বদেশ ডেস্ক: ভুয়া শিক্ষাগত যোগ্যতা ও কাজের অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিয়ে সিভি তৈরি করে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে কাজ জুটিয়ে নিয়েছেন এক নারী। নিজেকে উপস্থাপন করেছেন হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক সমপন্ন করা নারী হিসেবে। নিজের গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতে তৈরি করেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত টাইম ম্যাগাজিনের একটি ভুয়া কভারও। তাতে তাকে হাস্যোজ্জ্বল অবস্থায় দেখা গেছে। তবে সবচেয়ে বিস্ময়কর বিষয় হলো, এসবের কোনোটিই ধরতে পারেনি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রামেপর প্রশাসন। সবার চোখকে ফাঁকি দিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একটি শীর্ষ পদ দখল করে নিয়েছিলেন ওই নারী।
ওই নারীর নাম মিনা চেং। তার সিভি চাকরিদাতাদের কাছে আকর্ষণীয় করে তুলতে তাতে বাড়িয়ে উপস্থাপন করেছেন নিজের অর্জন।
এনবিসি নিউজের এক তদন্তে এমনটা বেরিয়ে এসেছে। এনবিসি জানিয়েছে, চেং মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ব্যুরো অব কনফ্লিক্ট অ্যান্ড স্ট্যাবিলিটি অপারেশন্সের একজন উপ-সহকারী মন্ত্রী। সিভিতে নিজেকে জাতিসংঘের একজন কর্মকর্তা হিসেবে দাবি করেছেন তিনি। তবে আদতে জাতিসংঘে এমন কোনো পদই নেই। এনবিসি আরো জানায়, মার্কিন পার্লামেন্টে সাক্ষ্য দেয়ার দাবিও করেছেন চেং। এমনকি রিপাবলিকান ও ডেমোক্রেট উভয় দলের সম্মেলনে ভাষণ রেখেছেন যা ভুয়া দাবি করেছেন। তার দাবির সমর্থনে কোনো প্রমাণ মেলেনি। এ বিষয়ে মন্তব্যের জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও চেং-এর সঙ্গে যোগাযোগ করে লন্ডন-ভিত্তিক দ্য ইন্ডিপেনডেন্ট। তবে কেউই কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।
ইন্ডিপেনডেন্ট জানায়, মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে কাজ করার পূর্বে ‘লিংকিং দ্য ওয়ার্ল্ডস’ নামে একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠানে ২০১০ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত কাজ করেছেন। তবে চলতি বছরের মে মাসে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় অভ্যন্তরীণ রাজস্ব পরিষেবা (আইআরএস) বিভাগ সংগঠনটির কর-মুক্ত স্ট্যাটাস কেড়ে নেয়। বিগত তিন বছরের কর ফেরত ফাইল জমা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় এই সুবিধা কেড়ে নেয়া হয়।
চেং একাধিকবার দাবি করেছেন, লিংকিং দ্য ওয়ার্ল্ডস আফগানিস্তান, মিয়ানমার, হাইতি ও কেনিয়াসহ বিশ্বজুড়ে স্কুল নির্মাণ করেছে। কিন্তু সংগঠনটির ২০১৪ সাল থেকে ২০১৫ সালের আইআরএস ফেরতে এমন কোনো তথ্য নেই। এমন কী সংগঠনটির ভিন্ন কোনো দেশে কোনো কর্মী থাকারই ইতিহাস নেই।
চেং আরো দাবি করেছেন, টাইম ম্যাগাজিনের কভারে তার ছবি ছাপা হয়েছে। তবে এনবিসি জানিয়েছে, তার এ দাবি মিথ্যা। ওই কভারটি ভুয়া। মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে তার জীবনীতে লেখা হয়েছে, তিনি হার্ভার্ড বিজনেস স্কুল থেকে স্নাতক পাস করেছেন। এর আগে সাউদার্ন মেথডিস্ট ইউনিভার্সিটি থেকে পড়াশোনা করেছেন। তবে ওয়াশিংটন পোস্ট হার্ভার্ড বিজনেস স্কুলের প্রচারণা ও যোগাযোগ বিষয়ক প্রধানকে উদ্ধৃত করে জানিয়েছে, সেখান থেকে স্নাতক নয় বরং একটি আট সপ্তাহের কোর্স সমপন্ন করেছেন চেং।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন উপ-সহকারী মন্ত্রী হিসেবে মাসে ছয় সংখ্যার বেতন পান চেং। যার ন্যূনতম পরিমাণ এক লাখ ডলার। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ইন্সটাগ্রামে তার ৪২ হাজার অনুসারী রয়েছে। তাদের কাছে নিজেকে প্রমাণ করেছেন বিশ্বজুড়ে মানবিক কর্মকা- করে বেড়ানো এক মানবাধিকারকর্মী। ওয়াশিংটনের অভিজাত সমপ্রদায়ের সঙ্গে তার চলাচল।
সামপ্রতিক সময়ে ট্রামপ প্রশাসনের একাধিক কর্মকর্তার যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠেছে। স্থানীয় গণমাধ্যমে একাধিক শীর্ষ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ভুয়া ক্যারিয়ার উপস্থাপনের অভিযোগ ওঠেছে। অনেকে এসব কর্মকর্তার নিয়োগ পদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। গত বছর হোয়াইট হাউসের শীর্ষ চিকিৎসক হিসেবে রনি জ্যাকসন নামে এক ব্যক্তিকে নিয়োগ দেন ট্রামপ। পরবর্তীতে অভিযোগ ওঠে তিনি কাজ করার সময় মদ পান করতেন। এমন কী প্রেসক্রিপশন ছাড়াই ওষুধ সরবরাহ করতেন। এ ছাড়া হোয়াইট হাউসের অপর এক কর্মকর্তা টেইলর ওয়েইনকে কোনো পেশাদারি অভিজ্ঞতা না থাকা সত্ত্বেও পদোন্নতি দেয়া নিয়ে খবর প্রকাশিত হয়। এর পরপরই তাকে বরখাস্ত করা হয়েছিল। চলতি বছরের আগস্টে টেক্সাসের কংগ্রেসম্যান জন র্যাটক্লিফের বিরুদ্ধে নিজের যোগ্যতা বাড়িয়ে উপস্থাপনের অভিযোগ ওঠে। সে সময় তাকে যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী গোয়েন্দা প্রধান হিসেবে নিয়োগ দেয়ার কথা বিবেচনা করা হচ্ছিল। তবে অভিযোগ ওঠার পর তার নিয়োগ বাতিল করা হয়।